এমব্যাসি আর ট্রাভেল এজেন্সিতে দৌড়াদৌড়ি করার ঝামেলায় অনেকে ভ্রমণের পরিকল্পনাই বাদ দিয়ে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের আশেপাশেই কিছু নয়নাভিরাম দেশ আছে যেখানে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন। সমুদ্র থেকে পাহাড়, বন-জঙ্গল থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া সবকিছুই পাবেন দেশগুলোতে।
অ্যাশ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর মাধ্যমে খুব সহজেই ভিসা আবেদন করে সাশ্রয়ী খরচের মধ্যে এসব দেশে ঘুরে আসা যায়। চলুন জেনে নিই দেশগুলোর নাম, সেখানে কি কি দেখতে পাবেন আর কিভাবে অ্যাশ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর মাধ্যমে সহজে ভিসা আবেদন করবেন।
বাংলাদেশ থেকে সহজে যেসব দেশের ভিসা পাবেন
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, ও ইন্দোনেশিয়ার ভিসা আবেদন করে এই ৫টি গন্তব্যে সহজে যেতে পারবেন। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক, আরব আমিরাতের শহর দুবাই, কিংবা ইন্দোনেশিয়ার বালি সমুদ্র সৈকত, একেক জায়গাতে অনুভূতি একেকরকম হবে। এবার জানাবো এই ৫টি দেশের মূল আকর্ষণ কি আর ভিসা আবেদন করতে দরকারি কি কি ডকুমেন্টস লাগবে।
টুরিস্ট ভিসাতে সহজে এশিয়ার যে দেশগুলো ভ্রমণ করবেন
বর্তমানে এশিয়ার দেশগুলো ঘোরার জন্য টুরিস্ট ভিসা, স্টুডেন্টস ভিসা, বিজনেস ভিসা, মেডিকেল ভিসা-সহ অনেক রকমের ভিসার ব্যবস্তা আছে। শুধুমাত্র পেশাগত ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন ভিসাতে অতিরিক্ত কাগজপত্র দেওয়া লাগে। এর মধ্যে টুরিস্ট ভিসাই সবচেয়ে ভাল হবে। তবে সব দেশে আলাদা না যেয়ে একসাথে ভ্রমণ করার প্যাকেজ নিলে সবচেয়ে ভালো হয়।
থাইল্যান্ড ভ্রমণ
থাইল্যান্ডে দেখার জিনিসের অভাব নেই। এখানে ইতিহাস ও সংস্কৃতির অসংখ্য নিদর্শন আছে। রাজধানী ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্যালেস বা সুকোতাই এর প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ আপনাকে অতীতে নিয়ে যাবে। আপনি অ্যাডভেঞ্চার লাভার হয়ে থাকলে ফ্যাং নাগা বে এর স্রোতে কায়াকিং বা সিমিলান আইল্যান্ডে স্নোরকেলিং করতে পারবেন। এখানকার ফি ফি আইল্যান্ড ভ্রমণার্থীদের অন্যতম পছন্দের স্থান। এখানে সানবাথ নিয়ে ফুকেটের রিসোর্টগুলিতে ঘুরতে পারবেন। আর নিরিবিলি জায়গা চাইলে চিয়াং রাই ও চিয়ায় মাইয়ের মোনাস্ট্রিগুলো আপনার জন্য সেরা হবে।
থাইল্যান্ডের ভিসা আবেদনে যেসব সাধারণ ডকুমেন্টস লাগবে
- সাত মাসের মেয়াদ আছে এরকম পাসপোর্ট
- গত ছয় মাসের মধ্যে তোলা ২ কপি ছবি (৪৫*৩৫ মিমি)
- ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট ও ৬০ হাজার টাকা ব্যালেন্স-সহ গত ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- ভিজিটিং কার্ড
ফিলিপাইন ভ্রমণ
ফিলিপাইনের একটা নিজস্ব সৌন্দর্য আছে যা অন্য কোনো দেশে পাবেন না। প্রাকৃতিক নিদর্শনের জন্য ইউনেস্কো এখানকার বেশ কিছু স্থানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখানে গিয়ে আপনি পুয়ের্তো প্রিন্সেসার পাথরের মাঝ দিয়ে চলা নদীতে নৌকা ভ্রমণ করতে পারবেন । আবার বাদামি রঙের চকোলেট হিলের অপার্থিব সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ফিলিপাইনের ব্যানইতে একটা ২০০০ বছরের পুরনো রাইস টেরেস আছে। আবার এখানে নীলাভ পানির এল নিডো সমুদ্র সৈকত আছে। ইতিহাস ভালবাসলে ম্যানিলার ইনট্রামুরোস দেখা যায় যেখানে স্প্যানিশ কলোনিয়াল সময়কার অনেক স্থাপনা পাবেন।
ফিলিপাইন ভিসা আবেদনে যেসব সাধারণ ডকুমেন্টস লাগবে
- নয় মাসের মেয়াদ আছে এরকম পাসপোর্ট
- ভিজিটিং কার্ড
- গত ৩ মাসের মধ্যে তোলা ২ কপি ছবি (২*২ ইঞ্চি)
- গত ৬ মাসের ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেটসহ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- ২ লাখ টাকার জমাকৃত ব্যালেন্স দেখানো
- টিআইএন সার্টিফিকেট ও এনআইডি কার্ড
- ফিরতি বিমানের টিকেট
- হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণ ও ভ্রমণ পরিকল্পনার লিখিত কপি
- এমব্যাসি থেকে ডাকা ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করা
আরব আমিরাত/দুবাই ভ্রমণ
আভিজাত্য ও সুবিশাল স্থাপনা উপভোগের সেরা জায়গা দুবাই। এখানকার প্রথম আকর্ষণ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ আল খলিফা। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির সেরা ব্যবহার দেখতে আইএমজি ওয়ার্লড অব অ্যাডভেঞ্চার ও অ্যাকুয়াভেঞ্চার ওয়াটার পার্কের মত বিশাল পার্ক আছে। এসব রেখে পুরনো দুবাইকে চিনতে হলে আল ফাহিদি সড়কে বা দুবাই মিউজিয়ামে ঘুরতে পারবেন। আর যদি কেনাকাটা করতে হয় তাহলে বুরজ আল আরব বা দুবাই মলের মত বিখ্যাত শপিং মলগুলোতে যেতে পারবেন।
আরব আমিরাত/দুবাইয়ের ভিসা আবেদনে যেসব সাধারণ ডকুমেন্টস লাগবে
- নতুন ও পুরনো পাসপোর্টের বায়োগ্রাফি পেজের রঙিন কপি
- এর আগে গিয়েছেন এরকম কোনো দেশের ভিসার রঙিন কপি
- ফিরে আসার সম্মতিপত্র
- গত ৩ মাসের মধ্যে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ভিজিটিং কার্ডের রঙিন কপি
- ১৮ বছরের নিচের ভ্রমণার্থীদের জন্ম নিবন্ধন পত্র
- ভ্রমণ বৃত্তান্তসহ ১,২০,০০০ টাকার সিকুরিটি ডিপোজিট দেখানো
সিঙ্গাপুর ভ্রমণ
সিঙ্গাপুর উন্নত সভ্যতার এক অনন্য নিদর্শন। এমন কিছু নেই যা এখানে পাবেন না। সারাবছর বর্ণিল সংস্কৃতি ও মানুষের ভর্তি থাকে দেশটি। এয়ারপোর্টে সেমেই গার্ডেনস বাই দ্য বে নেমে আলো ঝলমলে কারুকার্য দেখতে পারবেন। রহস্য ও রোমাঞ্চের ছোঁয়া পেতে যেতে পারেন ইউনিভার্সাল স্টুডিওসের বিশাল প্রাঙ্গণে। আর যদি পুরনো ইতিহাস দেখতে হয় চায়না টাউনের রাস্তা, রেস্তোরা আর ভবনগুলি দেখতে পারেন। এছাড়া ম্যারিনা বে, জু নাইট সাফারি, বা সেন্তোষা আইল্যৗান্ডের মত দারুণ সব ঘোরার জায়গা পাবেন।
সিঙ্গাপুর ভিসা আবেদনে যেসব সাধারণ ডকুমেন্টস লাগবে
- পুরনো পাসপোর্টসহ সাত মাসের মেয়াদ আছে এরকম নতুন পাসপোর্ট
- ভিজিটিং কার্ড
- এনআইডি/জন্মনিবন্ধনের কপি
- গত মাসের মধ্যে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি (৩৫*৪৫ মিমি)
- ৮০,০০০ টাকা ব্যালেন্স সহ ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানো
- স্থানীয় কারো আমন্ত্রণ পত্র
- কোভিড ভ্যাক্সিনেশন সার্টেফিকেট
- হোটেল বুকিংয়ের কপি
- বিমান টিকেটের কপি
ইন্দোনেশিয়া/বালি ভ্রমণ
ভ্রমণের জন্য ইন্দোনেশিয়ার বালির কথা কে না জানে! প্রকৃতি ও অ্যাডভেঞ্চারের সান্নিধ্য পেতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ বালিতে আসে। এখানে নিজের চোখে মাউন্ট বাতুর এর আগ্নেয়গিরি দেখা যায়। এছাড়া বিস্তৃৃত পাহাড়ের মাঝে সাঁতার কাটার জন্য তিগেনুংগান জলপ্রপাত তো আছেই। আবার উঁচু থেকে সমুদ্র ও পৃথিবী দেখতে নুসা পেনিডা আইল্যান্ডে পাহাড়ের চূড়ার ওঠা যায়। ইন্দোনেশিয়াতে কিন্তু অনেক মন্দির ও আশ্রম আছে। চাইলে টানালট, বেসাকি বা উবুদের মন্দিরে সময় কাটানো যায়। আর প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানোর জন্য নুসা দুয়া বা কাংগু সমুদ্র সৈকত তো আছেই।
ইন্দোনেশিয়া ভিসা আবেদনে যেসব সাধারণ ডকুমেন্টস লাগবে
- ৬ মাসের মেয়াদ আছে এরকম পাসপোর্ট
- গত ৬ মাসে তোলা রঙিন ছবি (৪*৬ সেমি)
- ব্যাংকে ২০০০ ডলার আছে তার প্রমাণ
- ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট
- ফিরতি বিমানের টিকেট
- হোটেল বুকিংয়েন প্রমাণ
- স্বাস্থ্য বীমার কপি
- কোভিড ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট
- এজেন্সির দেওয়া স্বাস্থ্যাবস্থার স্টেটমেন্ট
- আকস্মিক চিকিৎসা খরচের জন্য “লেটার অব কনসেন্ট”
এগুলো উপরের ৫টি দেশে যাবার জন্য দরকারি সাধারণ কাগজপত্র। পাশাপাশি ব্যাবসায়ী, শিক্ষার্থী ও চাকুরিজীবিদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স ও সার্টিফিকেটের মত অতিরিক্ত কিছু কাগজপত্র দেখানো লাগে। ঝামেলা এড়াতে অ্যাশ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর মাধ্যমে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এয়ার টিকেট বুক করা যায়। তবে সহজে ভ্রমণের জন্য বিশেষ হলিডে প্যাকেজ ও পাওয়া যায়। এতে বারবার আলাদাভাবে ডকুমেন্টস জমা না দিয়ে একবারে ট্রাভেল এজেন্সিকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দিলেই হয়। বিশেষ করে অ্যাশ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এভাবে একসাথে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া ঘুরে দেখার ভ্রমণ প্যাকেজ চালু রেখেছে।